সিনিউজ: দেশে প্রথমবারের মতো গবাদি পশুর ব্রুসেলোসিস রোগের টিকা উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দেড় বছরের গবেষণায় প্রাণীর প্রজননতন্ত্রে সংক্রমিত হয়ে গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব ও মৃত বাচ্চা প্রসবজনিত জটিলতা সৃষ্টিকারী ওই রোগের টিকা উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়েছেন বাকৃবির ওই গবেষক দল।
সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি জানান গবেষকেরা। প্রধান গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. আবদুল্লাহ আল মারুফ, ফারজানা ইয়াসমিন, সুকুমার রায়, আনন্দ চৌধুরী।
গবেষকরা বলেন, ব্রুসেলোসিস প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের গবাদি পশুতে ব্রুসেলা বায়োভার-৩ শনাক্ত করে সেখান থেকে হিট কিলড্ ভ্যাক্সিন তৈরি করেছি। গবেষণার কার্যক্রমে আমরা গর্ভপাত ঘটেছে এমন গাভী থেকে মৃত বাচ্চা ও গর্ভফুল নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছিলাম। পরে এ সব নমুনা থেকে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কালচার এর মাধ্যমে জীবাণু আলাদা করি।
তারা বলেন, পরে সেই জীবাণুকে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে অকার্যকর করা হয় যেন তা প্রাণীদেহে রোগ সৃষ্টি করতে না পারে। টিকা হিসেবে এর কার্যকারিতা অবলোকন করার জন্য অকার্যকর জীবাণু গিনিপিগের শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
তারা আরও বলেন, প্রতিসপ্তাহ অন্তর নয় সপ্তাহ পর্যন্ত ফলাফল রেকর্ড করা হয়। দেখা যায় দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা শুরু করেছে। এটি চতুর্থ সপ্তাহে সর্বোচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এরপরে এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং নবম সপ্তাহে এর কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া যায়নি।
প্রধান গবেষক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে পারলে গাভীর গর্ভপাত ও বাছুরের অকাল মৃত্যুরোধ এবং মানুষের সংক্রমণ রুখে দাঁড়াতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশ পশুপালননির্ভর অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখবে।
টিকা বাজারজাতকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, উদ্ভাবিত টিকাকে আরও কার্যকরী এবং মানসম্মতভাবে তৈরি করার জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণীদেহে এই টিকা আশানুরূপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশে বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
0 Comments
Please login to start comments